অনেকেই মনে করেন, “অটিজম” মানেই একধরনের মানসিক রোগ, যাদের সমাজে ঠাঁই নেই। কিন্তু আসলে, অটিজম কোনো রোগ নয়, এটি একটি নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল কন্ডিশন, যার ফলে একজন শিশুর যোগাযোগ, সামাজিকতা এবং আচরণগত বিকাশ ভিন্নভাবে গড়ে ওঠে।
বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অটিজম নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, তবে এখনো রয়েছে বিভ্রান্তি, কুসংস্কার ও চিকিৎসা-সুবিধার ঘাটতি।
বাংলাদেশে অটিজম নিয়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ রয়েছে, তবে প্রত্যন্ত অঞ্চল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
অনেক পরিবারেই শিশুর বিলম্বিত কথা বলা, সামাজিকতায় দুর্বলতা বা একঘেয়ে আচরণকে “জিন-পরীর সমস্যা”, “গায়েবি ব্যাপার” বা “গাধা” বলে অবহেলা করা হয়।
গ্রামে তো বটেই, শহরেও এখনো অনেকে অটিজম শব্দটির সঠিক ব্যাখ্যা জানেন না।
২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ সরকার অটিজম বিষয়ে বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়। উল্লেখযোগ্য উদ্যোগসমূহ:
২০১১ সালে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়া কনফারেন্স অন অটিজম
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (জএপ্রউফা) অধীন অটিজম স্কুল
তারপরও, বাস্তবে দেখা যায়, অধিকাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডিতেই অগ্রাহ্য হয় — তারা “দুষ্ট”, “জেদি”, “শিখতে চায় না” হিসেবে ভুল বোঝা হয়।
অটিজমসম্পন্ন শিশুদের পৃথিবীটা আমাদের চেয়ে একটু ভিন্নভাবে চলে।
তারা শব্দে নয়, অনুভবে কথা বলে। চোখে চোখে নয়, ছোঁয়ায়, চাহনিতে বোঝায়।
তারা হয়তো জোরে কথা বলে না, কিন্তু চুপচাপ একটা খেলনায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা মনোযোগ দিয়ে বলে দেয়—
“আমি আছি। আমাকে বোঝো।”
আমাদের করণীয়:
অটিজম বুঝুন, কুসংস্কার নয়
আচরণগত পরিবর্তনে শিশুকে জোর না দিয়ে থেরাপি, ভালোবাসা ও ধৈর্য দিন
প্রতিবন্ধী নয় — ভিন্নভাবে সক্ষম হিসেবে দেখুন
স্কুল-শিক্ষক-অভিভাবকদের একযোগে কাজ করা প্রয়োজন
সরকারি সহায়তার পাশাপাশি কমিউনিটি বেইজড সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে
আমরা যদি চাই, অটিজমসম্পন্ন শিশুরাও একদিন ডাক্তার, শিল্পী, প্রোগ্রামার কিংবা সংগঠক হয়ে উঠতে পারে।
শুধু প্রয়োজন সঠিক সময়ে শনাক্ত করা, সহানুভূতির সঙ্গে বোঝা এবং উপযুক্ত থেরাপি ও শিক্ষার সুযোগ।
বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে অটিজম সেবা চালু হলে,
আর প্রতিটি মা-বাবা যদি বোঝে —
“আমার সন্তান শুধু ভিন্নভাবে শিখছে, পিছিয়ে নেই” —
তবেই গড়ে উঠবে একটি সহানুভূতির বাংলাদেশ।